তৃতীয় পরিচ্ছেদ : বাচ্য এবং বাচ্য পরিবর্তন

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি - পঞ্চম অধ্যায় | | NCTB BOOK

১. রবীন্দ্রনাথ ‘গীতাঞ্জলি' লিখেছেন।
২. রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক ‘গীতাঞ্জলি' লিখিত হয়েছে।
৩. আমার খাওয়া হলো না।
ওপরের প্রথম বাক্যে কর্তার, দ্বিতীয় বাক্যে কর্মের, তৃতীয় বাক্যে ক্রিয়ার প্রাধান্য রয়েছে।
বাক্যের বিভিন্ন ধরনের প্রকাশভঙ্গিকে বলা হয় ‘বাচ্য’। বাচ্য প্রধানত তিন প্রকার : (১) কর্তৃবাচ্য (২) কর্মবাচ্য ও (৩) ভাববাচ্য।
কর্তৃবাচ্য : যে বাক্যে কর্তার অর্থ-প্রাধান্য রক্ষিত হয় এবং ক্রিয়াপদ কর্তার অনুসারী হয়, তাকে কর্তৃবাচ্যের বাক্য বলে। যেমন— ছাত্ররা অঙ্ক করছে।
১. কর্তৃবাচ্যে ক্রিয়াপদ সর্বদাই কর্তার অনুসারী হয়।
২.কর্তৃবাচ্যে কর্তায় প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি এবং কর্মে দ্বিতীয়া, ষষ্ঠী বা শূন্য বিভক্তি হয়। যথা— শিক্ষক ছাত্রদের পড়ান। রোগী পথ্য সেবন করে।
কর্মবাচ্য : যে বাক্যে কর্মের সাথে ক্রিয়ার সম্বন্ধ প্রধানভাবে প্রকাশিত হয়, তাকে কর্মবাচ্য বলে। যেমন-
শিকারি কর্তৃক ব্যাঘ্র নিহত হয়েছে।
১. কর্মবাচ্যে কর্মে প্রথমা, কর্তায় তৃতীয়া বিভক্তি ও দ্বারা দিয়া (দিয়ে), কর্তৃক অনুসর্গের ব্যবহার এবং ক্রিয়াপদ কর্মের অনুসারী হয়। যথা – আলেকজান্ডার কর্তৃক পারস্য দেশ বিজিত হয়। চোরটা ধরা পড়েছে।
২. কখনো কখনো কর্মে দ্বিতীয়া বিভক্তি হতে পারে। যথা- আসামিকে জরিমানা করা হয়েছে।
ভাববাচ্য : যে বাচ্যে কর্ম থাকে না এবং বাক্যে ক্রিয়ার অর্থই বিশেষভাবে ব্যক্ত হয় তাকে ভাববাচ্য বলে।
১. ভাববাচ্যের ক্রিয়া সর্বদাই নাম পুরুষের হয়। ভাববাচ্যের কর্তায় ষষ্ঠী, দ্বিতীয়া অথবা তৃতীয়া বিভক্তি প্রযুক্ত
হয়। যেমন—
(ক) আমার (কর্তায় ষষ্ঠী) খাওয়া হলো না।                (নাম পুরুষের ক্রিয়া)

(খ) আমাকে (কর্তায় দ্বিতীয়া) এখন যেতে হবে।       (নাম পুরুষের ক্রিয়া)

(গ) তোমার দ্বারা (কর্তায় তৃতীয়) এ কাজ হবে না    (নাম পুরুষের ক্রিয়া)

২. কখনো কখনো ভাববাচ্যে কর্তা উহ্য থাকে, কর্ম দ্বারাই ভাববাচ্য গঠিত হয়। যেমন-
এ পথে চলা যায় না ।
এবার ট্রেনে ওঠা যাক ।
কোথা থেকে আসা হচ্ছে?
৩. মূল ক্রিয়ার সঙ্গে সহযোগী ক্রিয়ার সংযোগ ও বিভিন্ন অর্থে ভাববাচ্যের ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন- এ ব্যাপারে আমাকে দায়ী করা চলে না। এ রাস্তা আমার চেনা নেই ।

                                                                                বাচ্য পরিবর্তন
কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্য
নিয়ম : কর্তৃবাচ্যের বাক্যকে কর্মবাচ্যে পরিবর্তিত করতে হলে- (১) কর্তায় তৃতীয়া (২) কর্মে প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি এবং (৩) ক্রিয়া কর্মের অনুসারী হয়।
জ্ঞাতব্য : কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়া অকর্মক হলে সেই বাক্যের কর্মবাচ্য হয় না।
কর্তৃবাচ্য                                                         কর্মবাচ্য
(ক) বিদ্বানকে সকলেই আদর করে।             (ক) বিদ্বান সকলের দ্বারা আদৃত হন।
(খ) খোদাতায়ালা বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন।    (খ) বিশ্বজগৎ খোদাতায়ালা কর্তৃক সৃষ্ট হয়েছে।
(গ) মুবারক পুস্তক পাঠ করছে।                 (গ) মুবারক কর্তৃক পুস্তক পঠিত হচ্ছে।
লক্ষণীয় : কর্তৃবাচ্যে ব্যবহৃত তৎসম মিশ্রক্রিয়াটি কর্মবাচ্যে যৌগিক ক্রিয়াজাত ক্রিয়াবিশেষণ রূপে ব্যবহৃত হয় ।
কর্তৃবাচ্য থেকে ভাববাচ্য
নিয়ম কর্তৃবাচ্যের বাক্যকে ভাববাচ্যে পরিবর্তিত করতে হলে- :
(১) কর্তায় ষষ্ঠী বা দ্বিতীয়া বিভক্তি হয় এবং (২) ক্রিয়া নাম পুরুষের হয়। যেমন-
কর্তৃবাচ্য                                          ভাববাচ্য
(ক) আমি যাব না।                          (ক) আমার যাওয়া হবে না।
(খ) তোমাকেই ঢাকা যেতে হবে।      (খ) তুমিই ঢাকা যাবে।
(গ) তোমরা কখন এলে?                 (গ) তোমাদের কখন আসা হলো?

কর্মবাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্য
নিয়ম : কর্মবাচ্যের বাক্যকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তিত করতে হলে-
(১) কর্তায় প্রথমা, কর্মে দ্বিতীয়া বা শূন্য বিভক্তি প্রযুক্ত হয় এবং (২) ক্রিয়া কর্তা অনুযায়ী হয়। যেমন—
কর্মবাচ্য                                                   কর্তৃবাচ্য
(ক) দস্যুদল কর্তৃক গৃহটি লুণ্ঠিত হয়েছে।    ক) দস্যুদল গৃহটি লুণ্ঠন করেছে।

(খ) হালাকু খাঁ কর্তৃক বাগদাদ বিধ্বস্ত হয়।  (খ) হালাকু খাঁ বাগদাদ ধ্বংস করেন।

ভাববাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্য
নিয়ম : ভাববাচ্যের বাক্যকে কর্তৃবাচ্যে রূপান্তরিত করতে হলে-
(১) কর্তায় প্রথমা বিভক্তি প্রযুক্ত হয় এবং (২) ক্রিয়া কর্তার অনুসারী হয়। যেমন-
ভাববাচ্য                                           কর্তৃবাচ্য
(ক) তোমাকে হাঁটতে হবে।               (ক) তুমি হাঁটবে।
(খ) এবার (তুমি) একটি গান কর।      (খ) এবার একটি গান করা হোক ।
(গ) তার যেন আসা হয় ৷                  (গ) সে যেন আসে।


কর্মকর্তৃবাচ্য
যে বাক্যে কর্মপদই কর্তৃস্থানীয় হয়ে বাক্য গঠন করে, তাকে কর্মকর্তৃবাচ্যের বাক্য বলা হয়। যেমন—
কাজটা ভালো দেখায় না ।
বাঁশি বাজে এ মধুর লগনে ৷
সুতি কাপড় অনেক দিন টেকে।

Content added By
Promotion